Brahmanbaria is a district(zilla) of Bangladesh. It is a traditional place and people of here are so friendly. This blog is all about this place. Here you find some heritage mark of long period. This district is familiar as capital of culture. Some qualitative people like classical musician Ostad Ayet Ali Khan, present law minister Anisul Huq are spawn of here.

Full width home advertisement

ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার আয়তন

Climb the mountains

Post Page Advertisement [Top]

(সমকাল রিপোর্ট)

বড়রা নিজেদের পাখিগুলোর আশ্রয়দাতা মনে করলেও ছোটরা মনে করে এগুলো কাজীবাড়ির সম্পদ। আশির দশকের শেষদিকে পাখিগুলো যখন আসতে শুরু করে তখন কাজীবাড়ির সবাই তাদের আশ্রয়টিকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব নেন। ছোটরা অবশ্য জন্ম থেকেই দেখে এসেছে পাখিগুলো। তবে ছোটদের সঙ্গে বড়দের ভাবনার পার্থক্যে পাখিগুলোর প্রতি তাদের আচরণে কোনো তারতম্য ঘটে না। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের কাজীবাড়ির আবালবৃদ্ধবনিতা দুই দশকের বেশি সময় ধরে পাখিগুলোকে আশ্রয় এবং নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিয়ে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এর তুলনা বিরল। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে পাখির সংখ্যা।

নিছক বেড়ানোর জন্যই বিজয়নগর যাওয়া। তিতাসপাড়ের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর অঞ্চলটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ হওয়ার মতো। কয়েক বছর আগেও এটি ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার অংশ। এলাকাটি ভাগ হয়ে ২০১০ সালে বিজয়নগর উপজেলার জন্ম। বিজয়নগর থানার ওসি আবদুর রব আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর তিনি নিজেই নিয়ে গেলেন কাজীবাড়ির পাখি দেখাতে।

ইসলামপুর গ্রামটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। মহাসড়কের একেবারে কাছেই পুলিশ ফাঁড়ি। ফাঁড়ির সামনের ছোট্ট রাস্তাটি ধরে ৫০০ গজ এগোলেই কাজীবাড়ি। অবশ্য রেলপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়ে সড়কপথেও ইসলামপুরে যাওয়া যায়।
গত রোববার প্রায় সন্ধ্যায় সরেজমিন দেখার জন্য ইসলামপুর পুলিশ ফাঁড়ির কাছে পৌঁছতেই শোনা গেল পাখির কলরব। কাছে গিয়ে দেখে মনে হলো সবুজ গাছজুড়ে ফুটে আছে থোকা থোকা পাখিফুল। আরও কাছে গেলে দেখা যায় মনের সুখে কোনো কোনো পাখি ডানা ঝাপটাচ্ছে। কোনোটি আবার নিজের ঠোঁট দিয়ে সঙ্গীর দেহ খুঁটে আদর করছে।
চলছে তারস্বরে কিচিরমিচির। কোনোটি আবার নিশ্চুপ, যেন ধ্যানমগ্ন। আগন্তুকদের দেখে এগিয়ে এলেন কাজী ইকবাল।

ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তির কাছে জানা যায়, ১৯৮৮ সালের দিকে প্রথম কাজীবাড়ির সামনের গাছগুলোতে পাখি আসতে শুরু করে। প্রথম প্রথম অনেকে আসতেন পাখি শিকার করতে। কাজীরা শুরু থেকেই পাখি মারার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। পাখিগুলোকে রক্ষা করতে গিয়ে কেনু মিয়া নামে এক শিকারির সঙ্গে কাজীবাড়ির ছেলে কাজী সাইদুল ইসলামের ঝগড়া হয়েছিল সেই সময়। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও হয়েছিল। কেনু মিয়া আজ বেঁচে নেই। কাজী সাইদুল ইসলামও এখন মূলত ঢাকায় থাকেন। তবে রোববার সন্ধ্যায় তিনি বাড়িতেই ছিলেন এবং খবর পেয়ে নিজেই ছুটে এলেন। এলাকাবাসীর কাছে সৈয়দ নামে পরিচিত কাজী সাইদুল ইসলাম

অবশ্য পাখিকে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে একক কৃতিত্ব নিতে নারাজ। তিনি তার বড় ভাই কাজী শফিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রতিষ্ঠাতা কাজী শফিকুল ইসলাম, চাচাতো ভাই কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কাজী মোশাররফ হোসেন, কাজী মনসুর আহাম্মদ ও জসিমউদ্দিন খানসহ কাজীবাড়ি এবং ইসলামপুর গ্রামের মানুষের ভূমিকার কথা বললেন। মোবাইল ফোনে আলাপ করিয়ে দিলেন কাজী শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কাজী শফিকুল ইসলাম বললেন, পাখিগুলোকে আশ্রয় দেওয়ার উদ্যোগটা সৈয়দের। তবে আমরা সবাই তাকে সমর্থন দিয়েছি। পাখিগুলোর গায়ে যেন একটাও আঁচড় না লাগে, এই দায়িত্ব নিয়েছেন কাজীবাড়ির সবাই। শুরু থেকেই বাড়ির ছোট শিশুরা পর্যন্ত পাখিদের পাহারা দিয়ে রাখার কাজ করে আসছে।

স্থানীয় গ্রিনভ্যালি আইডিয়াল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী কাজী শায়লা আখতার জানায়, ‘পাখিগুলো তো আমাদের কাজীবাড়ির। তাই আমরা সব সময় খেয়াল রাখি কেউ যেন এগুলো মারতে না পারে।’ পাখিগুলোর নাম কী জিজ্ঞেস করলে শায়লা বলে, ‘আমরা এগুলোকে ধনেশ পাখি বলে ডাকি।’

কাজী জুলহাস ইসলাম নামে কাজীবাড়ির এক যুবক জানান, এ পাখিগুলোকে স্থানীয়ভাবে শামুকখোঁচা বলা হয়ে থাকে। কাজীবাড়িতে পাখিগুলো সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ আসতে শুরু করে। থাকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত। সকাল হওয়ার আগেই পাখিগুলো বাসা ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে এবং দিনশেষে আবার এখানে এসে আশ্রয় নেয়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় তাই এখানে পাখি দেখতে আসা উৎসুক মানুষের ভিড় লেগে যায়। তিনি জানান, বন বিভাগের পক্ষ থেকে পাখিগুলোর এই নিরাপদ আবাসস্থলের খোঁজখবর নিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এসেছিলেন ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকার ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা রেজাউল আলমের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, যেসব ব্যক্তি, গ্রামবাসী, সংগঠন পাখির আবাসস্থল সংরক্ষণে ভূমিকা রাখছেন, তাদেরকে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণের অবদানের জন্য স্বীকৃতি দেওয়ার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে তিনি সরেজমিন কাজীবাড়ির পাখির আবাসস্থলটি পরিদর্শন করে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে ওই আবাসস্থলে কমপক্ষে দুই হাজার পাখি থাকে। এ পাখিগুলো হয়তো দিনের বেলা কাছাকাছি সরাইল উপজেলার বালিঙ্গাবিল, বড়বিল এবং নাসিরনগর উপজেলার ডুঙ্গাবিল ও চাচলবিলে চড়ে বেড়ায় এবং খাবার সংগ্রহ করে।

এপ্রিলে পাখিগুলো কোথায় চলে যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ মিলিয়ে যে বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চল রয়েছে, তারই কোথাও হয়তো আশ্রয় নেয় এ পাখিগুলো।

বন কর্মকর্তার এই ধারণা ঠিক হতে পারে বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের জীববৈচিত্র্য বিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ ড. আনিসুজ্জামান খান। কাজীবাড়ি থেকে তুলে আনা ছবি দেখে প্রাণিবিদ ড. আনিস বলেন, পাখিগুলোর নাম শামুকখোল। কয়েক দশক ধরে এশীয় শামুকখোলের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তবে এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছায়নি বলে আইইউসিএন এই পাখিগুলোকে নূ্যনতম বিপদগ্রস্ত বলে চিহ্নিত করেছে।

ড. আনিস আরও জানান, এশীয় শামুকখোল নামের এই পাখিটিকে ইংরেজিতে বলে এশিয়ান ওপেনবিল, এর বৈজ্ঞানিক নাম আনাস্টোমাস ওসিট্যান্স। বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ করলে দাঁড়ায়, মুখ খোলা বা হাই তোলা। এ জন্য পাখিটিকে হাই তোলা বা মুখ খোলা পাখিও বলা হয়ে থাকে। এটি আকারে বেশ বড়সড়। দৈর্ঘ্য গড়ে ৮১ সেন্টিমিটার। প্রজননকালে প্রাপ্তবয়স্ক শামুকখোল পাখির দেহের রঙ সাদা দেখায়। কাঁধ-ঢাকনি, ডানার প্রান্ত পালক, মধ্য পালক ও লেজ সবুজাভ কালো। কালচে রঙের ঠোঁট লম্বা ও ভারী। লম্বা পা, লম্বা ঠোঁটের বিশেষ এই পাখিটি বাংলাদেশ-ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো কোনো অংশে দেখা যায়।

পাখিটি মূলত শামুক-ঝিনুক খেয়ে জীবনধারণ করে। এ পাখির বিচরণ হাওর, বিল, মিঠাপানির জলা, হ্রদ, ধানক্ষেত, উপকূলীয় প্যারাবন ও নদীর পাড়ে। সাধারণত এরা দল বেঁধে থাকে। খাবারের অভাব না হলে পাখিগুলো জায়গা পরিবর্তন করে না। বর্ষাকালের শেষ দিকে শামুকখোলের প্রজনন ঋতু শুরু হয়। মূলত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস শামুকখোলের প্রজনন মৌসুম। যে বছর খরা হয়, সে বছর পাখিগুলো সাধারণত প্রজনন করে না। গাছে ডালপালা দিয়ে বাসা বানায়। বাসা বানানো শেষে স্ত্রী পাখি ডিম পাড়ে, সংখ্যায় দুই থেকে পাঁচটি। ডিমের রঙ সাদা। স্ত্রী ও পুরুষ দু’জনই ডিমে তা দেয়। প্রায় ২৫ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়।

No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

| Designed by Colorlib