১৬৬২ খ্রি. নির্মিত মোঘল আমলের ঐতিহাসিক নির্দশন এই সুরম্য মসজিদটি সরাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের আরিফাইল গ্রামে অবস্থিত। সরাইল উপজেলা চত্ত্বর থেকে প্রায় ১ কি.মি. পশ্চিমে মসজিদটির অবস্থান। এই মসজিদটি ৭০ফুটx২০ফুট আয়তনের। দেয়ালের পুরুত্ব ৫ফুট ৬ ইঞ্চি। স্থাপত্য কলা কৌশল ও অপূর্ব নির্মাণ শৈলীর কারণে মসজিদটিকে দেখতে অনেকটা তাজমহরে মতো মনে হয়। ৩৫০ বছর পূর্বে নির্মিত মসজিদটি একটি গুরুত্বপুর্ণ প্রত্ন নিদর্শন। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতাত্বিক অধিদপ্তরের অধীন মসজিদটি প্রত্ন সম্পদ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। মসজিদটিকে নিয়ে অনেক কল্প কাহিনী রয়েছে। মসজিদটিকে দেখতে দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই এসে থাকেন।
কিভাবে যাওয়া যায়:
বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিশ্বরোড মোড় এসে সিএনজি যোগে সরাসরি আসা যায়। উপজেলা চত্বর থেকে রিক্সা যোগে কিংবা পায়ে হেটেও যাওয়া যায়।
সরেজমিন আরিফাইল গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, মসজিদটির পাশেই বিশাল আয়তনের একটি দীঘি অবস্থিত; যার নাম সাগর দীঘি। মসজিদ লাগোয়া দক্ষিণে রয়েছে দুটি কবর, যা ‘জোড়া কবর’ নামে পরিচিত।
একদা ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী সরাইল বারো ভূঁইয়ার একজন ঈশা খাঁর শাসনে ছিল। তৎসময় ঈশা খাঁ এ মসজিদ ও পার্শ্ববর্তী জোড়া কবর নির্মাণ করেন বলে অনেক ঐতিহাসিক মতপ্রকাশ করেন। অন্য একটি অংশের মত, ঈশা খাঁর দুই স্ত্রীর সমাধিসৌধ হলো ‘জোড়া কবর’।
আবার অনেকের ধারণা, কবর দুটির প্রকৃত তথ্য অনাবিষ্কৃত। নানা কারণে জোড়া কবর রহস্যাবৃত। এ রহস্যে অনেকটা প্রভাব রেখেছে কবর দুটি থেকে নিচে অনেক গভীরে যাওয়া একটি সুড়ঙ্গ। যার শেষ কোথায়Ñ তার ধারণা কারো নেই।
মসজিদটিতে ঢুকে দেখা গেছে ভেতরকার যে কোনো শব্দ দেয়ালের অতিপুরুত্বের কারণে বাধা পেয়ে একটা ভৌতিক প্রতিধ্বনিত রূপে ফিরে আসে।
এমন নানা রহস্য, দীঘি, ‘জোড়া কবর’ এবং স্থাপত্য কলাকৌশল ও অপূর্ব নির্মাণশৈলীর ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি পুরুত্বের মসজিদটির ভেতরে উচ্চারিত যে কোনো শব্দের ভৌতিক আওয়াজের সুযোগে কতিপয় স্থানীয় অসাধু মসজিদ ও জোড়া কবরকে ঘিরে গড়ে তুলেছে মাজারসদৃশ ব্যবসা। দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষের একটি অংশকে পুঁজি করে তারা মানত ও তাবিজ-কবচের ব্যবসা শুরু করেছে।
অনেকেই নিজ আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের উদ্দেশ্যে এখানে মানত করে বিভিন্ন দ্রব্যাদি দিচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মানতের বিভিন্ন কিছু বুঝে নেওয়া একজন বলেন, ব্যবসা এখন অনেক ভালো। দৈনিক হাজার টাকা আয় হয়। প্রায়ই মানত হিসেবে লোকজন দিয়ে যায় মোরগ ও খাসি। সরাইলের কিছু প্রভাবশালী লোক ভাগভাটোয়ারা করে এসব নিয়ে যান।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও কবি মোহন্ত কাবেরী জানান, ‘ওই স্থানে অনৈতিক এবং ইসলামবিরোধী কাজ চলছে। কিছু টাউট-বাটপার ধান্দাবাজির আশ্রয় নিয়ে নিজের পকেট ভরছে।’
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমরান হোসেন বলেন, ‘অনিয়মের সঙ্গে আমার কোনো আপস নেই। স্থানটি আমি দেখেছি। সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
No comments:
Post a Comment