ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থেকে বিলুপ্ত প্রায় কলুর ঘানি । কলু সম্প্রদায় আজ আর তেমন নেই। সময়ের বির্বতন ও জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা পেশা বদল করেছেন। তাই চোখে পড়ে না কলুর ঘানিও। এক সময় এ উপজেলার প্রায় গ্রামেই কলু সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করতো। তাদের পেশাই ছিল সরিষা থেকে তেল উৎপন্ন করা এবং গ্রামে গ্রামে ফেরি করে তা বিক্রি করা। গ্রামের গৃহস্থরা কলু বাড়িতে গিয়ে সরিষা দিয়ে আসতো। আর কলুরা কাঠের তৈরি গাছে সরিষা ঢেলে একটি গরু- বলদ বা ঘোড়া দিয়ে ঘানি টেনে তেল উৎপন্ন করতো। এতে কলুদের যেমন লাভ হতো আবার গৃহস্থ বা সরিষার মালিকও পেত খাঁটি তেল। বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে লাভজনক অন্যান্য পেশায় চলে যাওয়ায় কলুর ঘানি আজ বিলুপ্ত প্রায়। তবুও জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে এখনও বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে এ পেশাকে ধরে রেখেছেন কেউ কেউ। তাই এখনও কদাচিৎ দেখা মেলে কলুর ঘানি টানার দৃশ্য। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ধরমন্ডল ইউনিয়নের পূর্বপাড়া গ্রামে এ রকমই একটি ঘানি টানার দৃশ্যপট চোখে পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ গ্রামের স্বামী আবদু রউফ ও স্ত্রী ললিতা বিবি আজও তার বাবার এ পেশাকে ধরে রেখেছেন। আবদুর রউফ জানান, পঞ্চাশ থেকে ষাট বছর ধরে আমরা এ পেশার সঙ্গে জড়িত। আগে আমার বাবা তা করতো। বাবার মৃত্যুর পর থেকে আমরা এ কাজ করে আসছি। তবে শুধু এ পেশার উপর নির্ভর কারে টিকে থাকা এখন আর কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। আবদুর রউফরে স্ত্রী ললিতা বিবি জানান, আমাদের ১টি ঘানি টানার গাছ আছে। ঘানি টানার কাজে আমরা ঘোড়া ব্যবহার করি। ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘানি টেনে যা তেল বের করা হয় তা বিক্রি করে আমাদের সংসার চলে না। ঘানি ঘোরাবার জন্য চোখ বাঁধা ঘোড়া ব্যবহার করা হয়। কলের ঘানির সাথে ঘোড়া ঘানি পাল্লা দিয়ে পারছে না বলে কলুরা আজ পেশাচ্যুত হয়ে পড়েছে। তবুও বাপ-দাদার এ পেশা ধরে রেখেছেন তারা।
No comments:
Post a Comment